হরেক রকম খেলনার মেলা!

সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান অনুশীলন বই - | NCTB BOOK
2

—নতুন কিছু উদ্ভাবনের আনন্দই আলাদা, কিন্তু সবসময় খুব সিরিয়াস বিষয় নিয়েই চিন্তা করতে হবে এমন কথা কে বলেছে? এই শিখন অভিজ্ঞতায় তোমার উদ্ভাবন করবে নতুন নতুন খেলনা, এবং তা নিছক বিনোদনের জন্যেই। তবে তোমরা নিজেদের পরিকল্পনায় যেসব খেলনা তৈরি করবে, যেগুলো শুধু সাজিয়ে রাখার জন্য যেন না হয়, বরং সেগুলো দিয়ে সত্যি সত্যি খেলাও যাবে। শুধু তাই নয়, নিত্য ব্যবহার্য বা ফেলে দেয়া উপকরণ দিয়ে তৈরি করবে বিধায় এগুলো বানাতে তেমন খরচও হবে না, আবার আবর্জনা কাজে লাগানোও হবে।

—খেলনা কীভাবে বানানো যায় ভাবছ? প্রথমেই একটা খেলনা নৌকা সবাই মিলে বানানোর চেষ্টা করা যাক। এই খেলনা নৌকা কিন্তু শুধু পানিতে ভেসে থাকবে তা-ই নয়, বরং সত্যি সত্যি স্পিডবোটের মত এগুবে! চলো শুরু করি।

⇒এই সেশনের পূর্বেই ফেলে দেওয়া কিছু উপকরণ যেমন- ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের পানির বোতল, বেশ কিছু রাবার ব্যান্ড, কয়েকটা পাটকাঠি অথবা পেন্সিল, একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের খাবারের চামচ, সুপার গ্লু অথবা ভালোমানের আঠা জোগাড় করে নাও।

⇒সেশনের শুরুতে শিক্ষকের নির্দেশনায় কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে যাও।

⇒এবার একটি প্লাস্টিকের বোতলের দুইপাশে দুইটি পাটকাঠি অথবা পেন্সিল এমনভাবে লাগাও যেনো বোতলের নিচের দিকে ২-৩ ইঞ্চি বাড়তি অংশ থাকে।

⇒কাঠি দুইটিকে রাবারব্যান্ড অথবা সুতার সাহায্যে খুব ভালো করে বোতলের সঙ্গে বেঁধে দাও।

⇒দুইটি প্লাস্টিকের খাওয়ার চামচের হাতল সমানভাবে কেটে গ্লু বা আঠার সাহায্যে দুই প্রান্তকে বিপরীতমুখী করে লাগিয়ে নাও।

⇒প্লাস্টিকের চামচ অথবা সুপার গ্লু না পাওয়া গেলে বিকল্প হিসেবে যেকোনো অ্যালুমিনিয়াম অথবা টিনের কৌটা আয়তাকার আকৃতিতে কেটে পিটিয়ে সোজা করেও ব্যবহার করোতে পারো। সেক্ষেত্রে ধাতব টুকরোটি রঙ করে নেওয়া যেতে পারে যাতে মরিচা না পরে।

⇒তারপর বোতলের সঙ্গে লাগানো কাঠির অথবা পেন্সিলের বাড়তি অংশটির সঙ্গে দুইটি রাবারব্যান্ড যুক্ত করে নাও।

⇒রাবারব্যান্ডের ভেতরে চামচ অথবা ধাতব বস্তুর আয়তাকার টুকরোটিকে আড়াআড়ি ভাবে ঢুকিয়ে খুব আঁটসাঁট করে পেঁচিয়ে নাও।

⇒ব্যাস তোমার খেলনা প্রস্তুত। এবার এটিকে জলাশয়ে অথবা চৌবাচ্চায় ছেড়ে দিয়ে দেখো তো কেমন করে চলে!

 

 

—এই নৌকাটির ক্ষেত্রে কী ঘটছে আসলে? কেন পানিতে ছেড়ে দেয়া মাত্রই এটা চলতে শুরু করল বলতে পারো? এই শক্তি কোথা থেকে আসলো? একইরকম ঘটনা কি আর কোথাও ঘটতে দেখেছ? দলের সবার সাথে আলোচনা করে নিচের ফাঁকা জায়গায় তোমার মতামত লিখে রাখো-

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

—অন্যান্য দলের সাথে মুক্ত আলোচনায় যোগ দাও। তাদের ভাবনা শুনে দেখো, কোন শক্তির ফলে নৌকায় গতির সঞ্চার হলো?

—তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বইটি থেকে ‘কাজ, শক্তি, ক্ষমতা' অধ্যায়টা পড়ে নাও। অধ্যায়ের প্রতিটি অংশ নিজে একবার পড়ে নাও, এরপর দলের বাকিদের সাথে আলোচনা করে দেখো। প্রথমে ‘কাজ’ এর ধারণাটা পড়ে আলোচনায় যোগ দাও ।

—এবার ভেবে দেখো, তোমাদের নৌকা যখন চলছিল, পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় এসময়ে কী কোন কাজ সম্পন্ন হয়েছে? তোমার উত্তর লিখে রাখো।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

—এবার শক্তির প্রসঙ্গে আসা যাক। নৌকাটিকে গতিশীল করতে শক্তির যোগান এলো কোথা থেকে?

—আবার দলে বসে একই অধ্যায়ের বাকি অংশ, অর্থাৎ শক্তি, ক্ষমতা, শক্তির বিভিন্ন রূপ ও রূপান্তর, শক্তির নিত্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলো পড়ে নাও। দলের সবার সাথে আলোচনা করো।

—এবার আবার ভেবে দেখো, নৌকার গতিশক্তি কোথা থেকে এলো? নৌকার রাবার ব্যান্ড যখন তুমি বল প্রয়োগের মাধ্যমে পেঁচিয়ে নিয়েছ তাতে যে স্থিতিশক্তি জমা হয়েছে সেটাই পরবর্তীতে নৌকার গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

—এখন ভেবে দেখো আর কোন কোন ক্ষেত্রে এরকম গতিশক্তি আর স্থিতিশক্তির পারস্পরিক রূপান্তর দেখা যায়?

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

—এবার নিজেদের খেলনা উদ্ভাবনের পালা। নিজেদের উদ্ভাবিত খেলনা নিয়ে শ্রেণিকক্ষেই তোমার একটা মেলার আয়োজন করতে পারো, যেখানে সব দল তাদের বানানো খেলনাগুলো সাজিয়ে রাখবে অন্যদের দেখার জন্য।

—খেলনা বানানোর শর্ত দুটি-

      ⇒শুধু সাজিয়ে রাখার মত কিছু বানালে হবে না, সেটির কোন বিশেষ চমকও থাকতে হবে! অর্থাৎ কোন খেলনা গাড়ি, নৌকা, এরোপ্লেন যা চালানো যায়; কিংবা হতে পারে গুলতি দিয়ে বানানো কোনো নতুন ধরনের খেলনা। মাথায় রেখো, শক্তির কোনো না কোনো রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তর এই খেলনার মডেলে দেখাতে হবে।

      ⇒খেলনা বানাতে গিয়ে কোনো দামি, খরচসাপেক্ষ উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না। আশেপাশেই পাওয়া যায় এমন উপকরণ ব্যবহার করবে, সবচেয়ে ভালো হয় ফেলে দেয়া উপকরণ ব্যবহার করলে। তোমাদের খেলনার নকশায় অন্তত একটা উপকরণ থাকা দরকার তোমরা ব্যবহার না করলে যেটির ঠিকানা হত ডাস্টবিন। এর ফলে আবর্জনাও কমবে, পরিবেশেরও উপকার হবে।

—কী ধরনের খেলনা বানাতে চাও সেটা আগে দলের সবাই মিলে ঠিক করো। এরপর খেলনা বানানোর পরিকল্পনা, খসড়া নকশা, উপকরণের তালিকা তৈরি করার পালা। পরিকল্পনা করার সময় দলের সদস্যদের সবাই এককভাবে বা জোড়ায় বসে খেলনার পরিকল্পনা ও নকশা দাঁড় করাও। তুমি একা বা তোমার বন্ধুর সাথে মিলে বসে একটা নকশার পরিকল্পনা করো, তোমাদের আইডিয়াটা নিচের ছকে এঁকে রাখো। কী ধরনের উপকরণ লাগতে পারে তাও আলোচনা করে দেখো, এবং ছকের নির্দিষ্ট জায়গায় লিখে রাখো।

নকশা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

উপকরণ তালিকা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

—তোমার দলের বাকিরাও নিশ্চয়ই খেলনার পরিকল্পনা ও নকশা করেছে। দলের সবাই মিলে বসে যাচাই বাছাই করে কোন পরিকল্পনাটি সবচেয়ে কার্যকরী ও মজার হতে পারে তার উপর ভিত্তি করে এক বা একাধিক আইডিয়া বেছে নাও। বাছাই করার সময় খেলনা তৈরির যে দুইটি শর্ত দেয়া আছে সেগুলো মাথায় রেখো কিন্তু!

—খেলনা তৈরির ক্ষেত্রে উপকরণ হিসেবে ফেলে দেয়া বাতিল জিনিসপত্র যেমন- ফেলে দেয়া বোতল বা কৌটা, টিস্যু রোল, নষ্ট কলম, কার্ডবোর্ডের বাক্স, রাবার ব্যান্ড থেকে শুরু করে যেকোন কিছু ব্যবহার করোতে পারো। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধাতব/অধাতব জিনিস ব্যবহার করা যেতে পারে।

—ধাতব জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে মরিচা ধরে গেলে আমরা ফেলে দিই অনেক জিনিস যেটা রঙ করা করা থাকলে বেশি টিকত। একই বুদ্ধি ব্যবহার করতে পারো তোমাদের খেলনা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও, ধাতব জিনিস ব্যবহার করলে সেটিকে রঙ করে নিতে পারো যাতে মরিচা না পরে।

—পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়ে গেলে নিচের ছকে নকশা এঁকে ফেলো এবং পাশে কী কী উপকরণ লাগবে তার তালিকা করো যাতে পরের সেশনের আগেই সব যোগাড় করে ফেলা যায়।

নকশা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

উপকরণ তালিকা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

—পূর্ব নির্ধারিত দলে ভাগ হয়ে খেলনা তৈরির কাজ শুরু করো। দলের সবাই যেনো সক্রিয় অংশগ্রহণ করে সেদিকে খেয়াল রাখো।

—খেলনা তৈরির ক্ষেত্রে মাথায় রাখো যেনো এখানে বিভবশক্তি থেকে গতিশক্তির রূপান্তর হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়। এই দুই ধরণ ছাড়াও অন্য কোনো শক্তির রূপ যদি তোমাদের খেলনার মাধ্যমে দেখাতে চাও তাহলে দেখাতে পারো।

—খেলনা বানানো হয়ে গেছে? এবার তোমাদের বানানো খেলনা প্রদর্শনীর জন্য শ্রেণিকক্ষে সবাই মিলে একটি মেলার আয়োজন করো।

—এক্ষেত্রে বেঞ্চ অথবা টেবিল সাজিয়ে খেলনা গুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখো।

—প্রত্যেকটা দল সকল সদস্যসহ তাদের তৈরিকৃত খেলনাটি চালিয়ে কীভাবে বিভবশক্তি থেকে গতিশক্তির রূপান্তর হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করো।

—এভাবে একে একে প্রত্যেকটা দল তোমাদের খেলনা প্রদর্শণ করে শক্তির রূপান্তর, শক্তির নিত্যতার ব্যাখ্যাসহ কীভাবে খেলনাটিতে রিসাইক্লিং করা হয়েছে তা উপস্থাপন করো।

—নিচের বাড়ির কাজটি পরের সেশনে করে আনবে।

—নিচের ছবিতে কোন ক্ষেত্রে কীভাবে শক্তির রূপান্তর হচ্ছে তা তীর চিহ্নের পাশে লেখ ।

Content added By
Promotion